ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শিকারির ফাঁদে হারিয়ে যাচ্ছে বন মোরগ

ওওওওওমোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ

বন্যরা বনে, সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। বন মোরগ, বনেই থাকার কথা। কিন্তু শিকারির উৎপাতে হারিয়ে যেতে বসেছে এই বন মোরগ। দেখতে দেশীজাতের মোরগের মত হলেও ওজন ও আকারে অনেকটা ছোট। এক গাছ থেকে অন্য গাছে, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে দ্রুতগতিতেই উড়ে বেড়ায়। ওজন সর্বোচ্চ ১ কেজি, আর মুরগীর ওজন ৫শত গ্রাম থেকে ৭শত গ্রাম হয়।

বন মোরগের রং লাল ও কালো আর বন মুরগীর রং হালকা লাল। বন মুরগী ১০-১২টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে দেশীয় মুরগীর ডিমের চেয়ে একটু ছোট। বন মোরগ-মুরগী গহীন অরণ্যে থাকতে পছন্দ করে। একা পাহাড়ি পথে চলাফেরা করলেই দেখা মিরবে বন মোরগের ছুটাছুটি। কিন্তু এখন তা একেবারেই দুর্লভ। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবানের সব কয়টি উপজেলায় গহীন অরণ্যে শিকারীদের উৎপাতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দূর্লভ বন মোরগ।

একইভাবে সাপ্তাহিক বাজারের দিনে বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি বাজারে ১০-২০ জন শিকারী বিপুল সংখ্যক বন মোরগ এবং পোষ্য বন মোরগের প্রকাশ্যে বিক্রি করেন। প্রকাশ্যে বন মোরগ বিক্রি করলেও এ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অকার্যকর। ফলে পাহাড় থেকে ক্রমেই বিলুপ্ত কিংবা হারিয়ে যাচ্ছে এ বন মোরগ। শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে জঙ্গলে কিছু কিছু সময় বন মোরগ-মুরগী দেখা যায়।

২৩ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সকালে লামা বাজারে কথা হয় বন মোরগ শিকারী আমিনুল হক সঙ্গে। তিনি জানান, ঘরে পোষা বন মোরগকে বন মোরগের আবাস স্থলের কাছাকাছি নিয়ে; পায়ে চিকন রশি দ্বারা বেঁধে রাখেন। পোষা বন মোরগ তখন বাঁক দিতে থাকে। তখন বন মোরগগুলো এ মোরগটিকে মারতে আসে। মারামারির এক পর্যায়ে দূরে লুকিয়ে থাকা শিকারী দৌড়ে গিয়ে বন মোরগটিকে ধরে ফেলেন। কোন কোন শিকারী চিকন সুতার কল, ফাঁদ ও জাল দিয়ে একসাথে ৭-৮টি মোরগ-মুরগী শিকার করেন। আবার কোন কোন শিকারী ধানের সাথে বিষ মিশিয়ে আবাস স্থলে ছিটিয়ে দেয়। আর এ ধান খেয়ে ছোট-বড় অনেক মোরগ-মুরগী মারা যাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট আগে জবাই করে দেয়। অন্যাথায় এরা খুব রাগী হওয়ায় নিজের পায়ের ধারালো নখ দিয়ে গলার রগ ছিড়ে আত্বহত্যা করে বলেও শিকারীরা জানান।

শিকারীরা ১টি বন মোরগ ৪শত থেকে ৫শত টাকা দরে বিক্রি করেন। আর বন মুরগী বিক্রি করে ৩শত-৪শত টাকায়। অনেকে অতিথি আপ্যায়ন অথবা সখ করে খাওয়ায় জন্য শিকারীদের আগাম টাকা দিয়ে থাকেন বন মোরগের জন্যে। একটি পোষা বন মোরগের দাম ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন হাটবাজারে বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। যে বন মোরগটি যত বেশী শিকারি তার দাম তত বেশী।

শিকারীরা জানায়, শীত মৌসুম বন মোরগ শিকারের উপযুক্ত সময়। এ সময় একটি পোষা বন মোরগ থেকে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় শতাধিক বন মোরগ শিকারী এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বন মোরগ শিকারের বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে কেউ বন্য প্রাণী শিকার করলে, তার বিরুদ্ধে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: